Breaking News

রাজস্থান সার্কিট সফরে দেখে নেওয়া রাজপুতদের রাজকাহিনি

স্বাতী চ্যাটার্জি- চলুন আমরা তৈরি হয়ে নিই, একসময়ের ভারতের রাজপুতদের গড় রাজস্থান সফরে যাওয়ার জন্য। এমনিতে রাজস্থান রাজ্যটি পুরো সফর করতে, আর ভালো করে ঘুরে দেখতে গেলে একবারে সম্ভব নয়। তাই সার্কিট তৈরি করে বেড়ানোই ভালো। কারণ রাজস্থানের প্রত্যেকটি কোনাই গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য। তাই এবারের পর্বে থাকছে, বাংলার পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্যুর সার্কিট। এই সার্কিটে যাত্রা শুরু হবে যোধপুর থেকে শেষ হবে জয়পুরে। মাঝে দেখে নেওয়া জয়শলমীর, মাউন্ট আবু, উদয়পুর ও পুষ্কর। থাকছে ডিটেল প্রতিবেদন।

যোধপুর ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মরুরাজ্য মাড়ওয়াদের রাঝধানী ছিল যোধপুর। রাঠোর সেনাপতি রাও যোধার হাতে রাজস্থানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরের জন্ম নেয়। সময়টা ১৪৫৯ সাল। এখানে অধিকাংশ বাড়ির রং নীল- তাই একে ব্লু সিটি অফ ইন্ডিয়াও বলা হয়। থর মরুভূমির প্রধান প্রবেশ দ্বারই হল যোধপুর। যোধপুর স্টেশন থেকে বেরোলেই লাল পাহাড়ের মাথায় দুর্গ দেখা যায়। ১২৫ মিটার উঁচু পাহাড়ের ওপর মেহেরানগড়ের প্রাচীর। প্রাচীরের প্রায় ৫ কিমি দীর্ঘ। পাহাড়কে বেড় করে খাড়া রাস্তা উঠেছে দুর্গাফটকের সামনে। এই দুর্গের মধ্যে একাধিক রাজমহল রয়েছে। মোতিমহল, ফুলমহলস শিশমহল, শিলেখানা, দৌলতখানা হয়ে দুর্গাপ্রাসাদের ছাদে পৌঁছলে একাধিক কামান দেখা যায়।

প্রাসাদ মিউজিয়ামে কারুকাজ করা আছে। রাখা আছে হাওদা, মিনিয়েচার পেন্টিং, নানা বাদ্যযন্ত্র, আসবাব, পোশাক ইত্যাদি। মেহেরনগড় থেকে পাহাড়ের একটা বাঁক নামলেই পড়বে যোশবন্ত থাডা। ১৮৯৯ সালে মহারাজ যশোবন্তথাডার স্মৃতিতে তৈরি হয় এই মন্দির সৌধ। যশোবন্তথাডার কারুকার্য ও স্থাপত্যশৈলী রাজকীয়। এরপর দেখে নিন উমেদভবন প্রাসাদ। বিরাট বাগানঘেরা সুউচ্চ এই প্রাসাদ যোধপুরের মহারাজা উদেমসিং ২০ শতকের মাধামাঝি একটি তৈরি করান। এই প্রাসাদ নির্মাণ হতে সময় লেগেছে ১৬ বছর। প্রাসাদের একাংশে এখনও রাজপরিবার বসবাস করেন। অন্য একটি অংশে তৈরি হয়েছে হেরিটেজ হোটেল।

শহরের অন্যান্য দ্রষ্টব্যগুলি হল গভর্নমেন্ট মিউজিয়াম, ৫ কিমি দূরে বালসমন্দ লেক ও মিউজিয়াম, ৯ কিমি দূরে মান্ডোর উদ্যান, ১১ কিমি দূরে কৈলানা লেক, ৯ কিমি দূরে মহামন্দির, গিরদিকোট ও সর্দার মার্কেট।

জয়শলমীর- যোধপুর থেকে জয়শলমীরের দূরত্ব ২৬৪ কিমি। ভায়া পোখরান হয়ে গেলে ২৮১ কিমি। পোখরান হয়ে গেলে কিছুক্ষণ বিরতি নিয়ে ঠাকুর বিক্রম সিংহের তৈরি ৫০০ বছরের পুরনো দুর্গ, ভেরতে মিউজিয়াম, জৈন মন্দির দেখে নেওয়া যায়। এখান থেকে ২৪ কিমি দূরে রয়েছে পরমাণু বিস্ফোরণস্থল। পোখরান থেকে রামদেওড়া ১২ কিমি এখানেই সেই বিখ্যাত সোনার কেল্লা ছবির শ্যুটিং স্পট। এখানে একটি বড় রামন্দির রয়েছে। জয়শলমীর শহরে ঢোকার বেশ কিছুটা আগে থেকেই সোনালি রঙের দুর্গ চোখে পড়ে। ওটি বাঙালির অতিপ্রিয় সোনার কেল্লা বা জয়শলমীর ফোর্ট। ৮০ মিটার উঁচু পাহাড়ের মাথায় ৩০ ফুট উঁচু প্রাচীর ও ৯৯টি গম্বুজ ঘেরা এই দুর্গ রাজস্থানের দ্বিতীয় প্রাচীন কেল্লা। দুর্গের ভিতরে এখনও বহু স্থানীয় বাসিন্দা রয়েছেন।

দুর্গের বাইরে চক, এছাড়া বাজার এলাকায় রয়েছে বহু হস্তশিল্প সামগ্রীর দোকানপাট। স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড চত্বরে রয়েছে ছোট বাজার, চক পেরিয়ে চোখে পড়বে তাজিয়া টাওয়ার। কেল্লায় পৌঁছনোর দুটি রাস্তা রয়েছে। একটি হল, ডানদিকে ত্রিকূট পাহাড়কে বেড় দেওয়া পিচরাস্তা ধরে। সুন্দর পথ হলেও বেশ খানিকটা ঘুরতে হয়। অন্যটি হল, দুর্গটিকে ডানদিকে রেখে বাজার দোকানের রাস্তায় এগোনো প্রাসাদের মূল দরবারে যেতে গেলে চারটি ফটক পার করতে হবে। গণেশপোল, সুরজপোল, ভূত পোল ও হাওয়া পোল। শেষ ফটক পার করলেই সৌজা পৈঁছে যাবেন মহারাজার আম দরবারে। জায়গাটিকে দশেরা চক বলা হয়। দেওয়ানি আমের মুখোমুখি রাজমহল। সেই রাজপ্রাসাদে পাথর কেটে কারুকাজ করা ঝুলবারান্দা, জানলা, সিংহদরজা আছে। সাততলার এই সিটি প্যালেসে সর্বোত্তম বিলাস, আখাইবিলাস, গজমহল, রংমহল এবং মোতিমহল। মোট ৫টি আকর্ষণীয় মহল রয়েছে।

আরও পড়ুন- অফবিট উইকেন্ডের খোঁজ করছেন? ঘুরে আসুন কাহালগাঁও

কেল্লা চত্বরের গলিপথে হেঁটে ঘুরে বেড়ানো যায়। চলার পথে চোখে পড়বে জৈন মন্দির। মোট ৭টি মন্দির রয়েছে। তার মধ্যে ২টিতে প্রবেশ করা যায়। দুর্গ থেকে বেরিয়ে শহরের গলিপথে হাঁটতে হাঁটতে দেখে নিন এক একটি হাভেলি। পাটোয়াঁ কি হাভেলি এদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। দেখে নিন নাথমলজি কি হাভেলি। এখানকার আকর্ষণ হল পাথরের তৈরি হাতি। ভবনের প্রবেশপথটিও পাথরের নকশা কাটা। এবার দেখে নিন, সেলিম সিং কি হাভেলি। ৩০০ বছর আগে জয়শলমীরের প্রধানমন্ত্রী সেলিম সিং এই ভবন নির্মাণ করান। বহু ঝরোখা শোভিত, আর্চ বিশিষ্ট এই হাভেলির গঠনশৈলী অনন্য। খ্রিস্টিয় চতুর্দশ শতকে মহারাজা গদ্দি সিং ত্রিকূট পাহাড়ের নীচে একটি জলাশয় তৈরি করিয়েছিলেন মরুশহরে জল সরবরাহের জন্য। মূলত বর্ষার জল্ পুষ্ট এই জলাশয়।

তিলো কা পোল পেরিয়ে ধাপকাটা পাথুরে সিঁড়ি দিয়ে বিরাট দিঘিতে নামতে হবে। একপাশ দিয়ে বেড় দিয়ে রয়েছে একাধিক মন্দিরঘর। বাঁদিকে হলুদ মন্দিরবাড়ির সামনে ছোট ঝরনা ও জলের মধ্যে উঁচু নজর মিনার রয়েছে। গদসিসর লেক দেখে রাস্তায় ওঠার পথে বাঁদিকে রাজস্থনি ফোকলোর মিউজিয়াম।

জলশলমীর শহরের দুর্গ এলাকার নীচে সদরমান্ডি এলাকার মুখ্য আকর্ষণ তাজিয়া টাওয়ার শহরের একপ্রান্তে ব্যসছত্রি। জয়শলমীরের নিজস্ব সোনালি হলুদ পাথরের কারুকাজ করা অজস্র স্মৃতি মন্দির সৃষ্টি করা হয়েছিল একটি রুক্ষ পাথরের টিলার মাথায়। জলশলমীরের সূর্যাস্ত দেখার সবচেয়ে ভালো জায়গা এটি। পরদিন সকালে একটি অটো রিক্সা বা গাড়ি ভাড়া করে কাছে পীছে বেড়ানোর জায়গাগুলো দেখতে যাওয়া যায়।

৭ কিমি দূরে জয়শলমীরের পশ্চিমে লেক বাগিচায় ঘেরা অমর সাগর। এখানে একটি জৈন মন্দির রয়েছে। বাগান সবুজ গাছপালা আর ফুলে ঘেরা রাজপরিবারের অবকাশ বিনোদনের জায়গা হল মূলসাগর। শহর থেকে এর দূরত্ব ৯কিমি। এরপরের রামগড়ের রাস্তা ধরে এগোলে। কাক নদীর পাড়ে রামকুন্ডে পৌঁছনো যাবে। এককালে জয়শলমীরের রাজা ছিলেন, মহারাওয়াল অমর সিং। তাঁর রাজত্বকালে মহারাওয়ালের গুরু ছিলেন অনন্তরাম।

গুরুদেবের স্মৃতি রক্ষার্থে অমরসিঙের স্ত্রী মনসুখী দেবী রামকুণ্ডে মন্দির গড়েছিলেন। মন্দিরটি রামের উদ্দেশে নিবেদিত হলেও, সেখানে ভৈরোঁ দেব ও গণেশের মূর্তি রয়েছে। মন্দিরের কাছে বেশ কয়েকটি ছত্রিও দেখা যায়।

এপথেই যেতে হবে লধুরবা। লধুরবাতে অসাধারণ শিল্পমণ্ডিত ষড়ভূজ জৈন মন্দির, কল্পতরু বৃক্ষ দেখে ফিরতি পথে বড়াবাগ। বালিয়াড়ি ঘেরা মরুদ্যান। ঘনসবুজ গাছে ঘেরা বিরাট প্রান্তর পেরিয়ে উঁচু বালিয়াড়ির মাথায় পৌঁছতে হয়। সেখানে জয়সওয়াল রাজ পরিবারের একাধিক সমাধি মন্দির রয়েছে। শহর থেকে দূরত্ব ৫ কিমি। যাওয়ার পথে একাধিক বিরাট উইন্ডমিল দেখা যায়।

জয়শলমীর শহর থেকে ৪০ কিমি দূরে অবস্থিত খুরি স্যান্ড ডিউনস। যাওয়ার পথে দেখে নেওয়া যায় উড ফসিল পার্ক, তেমরিরাই মন্দির ও বারনা মরুগ্রাম। উটের পীঠে করে মরুভূমির বুকে সূর্যাস্ত দর্শন সেরে টুকটাক খাবারের সঙ্গে রাজস্থানী সংস্কৃতির এক নৃত্যগীতির অনুষ্ঠান উপভোগ করা যায়। তারপর আবার জয়শলমীরে ফিরে আসা। ইচ্ছে করলে রাতে খুরিগ্রামে থাকতে পারেন।

শহর থেকে ৪৫ কিমি দূরে অবস্থিত স্যাম সেন্ড ডিউনস। উটের পীঠে করে মরুভূমি ভ্রমণ শেষে মনোরম সূর্যাস্ত দর্শন। পরে রাতের খাবার সহ , নৃত্যগীতের অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারেন। মরুভূমির বুকে সূর্যাস্ত দেখা ও রাতে এখানে থাকা এক আলাদা অভিজ্ঞতা। পরের দিন সকালে ফেরার পথে দেখে নেওয়া যায় কাবা ফোর্ট। এখানে রয়েছে পরিত্যক্ত জনমানবহীন এক বিশাল গ্রামের ধ্বংসাবশেষ। পাশের পাহাড়ের ওপর দুর্গ ও মিউজিয়াম। প্রায় ৮০০ বছরের প্রাচীন এই দুর্গ। কাছেই রয়েছে কুলধারা গ্রাম। এটিও একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত জনমানবহীন বড় গ্রাম। দু তিনটি সুন্দর মন্দির রয়েছে। এরপর অমরসাগর জৈনমন্দির। মন্দিরের পাশের সরোবরটি শুকনো। এরপরে দেখে নিন লোধাটা জৈন মন্দির।

রাজস্থানের সেই ভৌতিক গ্রাম কুলধারা, যেখানে রাতে থাকা মানা- সাবস্ক্রাইব করুন Travel Tv Bangla

মাউন্ট আবু- আরাবল্লী পর্বতের দক্ষিণ অংশে ১২১৯ মিটার উচ্চতায় মাউন্ট আবু রাজস্থানের একমাত্র হিল স্টেশন। পাহাড়ঘেরা নীল রঙা জলের লেক। আর প্রাচীন দিলওয়াড়া জৈন মন্দির দেখতে প্রায় সারাবছরই এখানে পর্যটকেরা আসেন। প্রধান আকর্ষণ দিলওয়াড়া জৈন মন্দির। এগারো থেকে তেরো শতকের মধ্যে দিলওয়াড়া মন্দির গুচ্ছ তৈরি হয়। তাদের মধ্যে প্রাচীন বিমল বাসারি মন্দির।

১০৩১ সালে গুজরাটের ধনকুবের বিমল শাহের তৈরি। এই মন্দিরের জৈন তীর্থঙ্কর ঋষভদেবের মূর্তি রয়েছে। পাথরের সুক্ষ্ম কারুকাজে ভরা মন্দিরের দেওয়াল স্তম্ভ খিলান অনবদ্য। লুনা বাসাহি মন্দিরে, নেমিনাথের মূর্তি রয়েছে। মন্দিরে মোবাইল ফোন ও ছবি তোলা নিষিদ্ধ। মাউন্ড আবুর ঠিক মাঝখানেই নাক্কি লেক। লেকের একপাশে টিলার ওপর ব্যাঙের আকৃতির টোডরক। পায়ে হেঁটে যেতে হবে। লেকের জলে প্যাডেল বোট, শিকারায় বোটিং করা যায়। বোটিং পয়েন্টের পাশেই বাগিচা। শহর থেকে ৮কিমি দূরে অচলগড় দুর্গের মধ্যে অচলেশ্বর মহাদেব ও কান্তিনাথ জৈন মন্দির রয়েছে। ১৪ শতকের রানা কুম্ভ এই দুর্গ নির্মাণ করেন। এখানে গাড়িতেই পৌঁছনো যায়। ১৫ কিমি দূরে গুরু শিখর (১৭২২ মিটার) মাউন্ট আবুর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। গুরুশিখরের ছোট শিবমন্দির ও দত্তাত্রেয় মন্দির রয়েছে।

আবু পাহাড়ের অন্যান্য দ্রষ্টব্য হল, অধরাদেবী মন্দির, সানসেট পয়েন্ট, হানিমুন পয়েন্ট, শ্রীরঘুনাথজি মন্দির, ওম শান্তি ভবন, গভর্নমেন্ট মিউজিয়াম ইত্যাদি।

উদয়পুর- প্রাসাদ লেকের শহর উদয়পুর, আরাবল্লী পর্বতে ঘেরা। ১৫৫৯ সালে মহারাজা উদয় সিং এই শহরের পত্তন করেন। শহরের প্রধান দ্রষ্টব্য সিটি প্যালেস। ত্রিপোলিয়া গেট পেরিয়ে প্রশস্ত উঠোন, মাঝখানে রয়েছে পাথর বাঁধানো বাগান। এই সবের এক দিকে বই, জামাকাপড়, হস্তশিল্প সামগ্রীর দোকান রয়েছে। অন্যদিকে সুউচ্চ প্রাসাদ। ত্রিপোলিয়া গেটের পাশেই রয়েছে টিকিট কাউন্টার। পিছোলা লেকের ধারে এই প্রাসাদের মধ্যে দিলখুস মহল, শিসমহল, মোতিমহল, কৃষ্ণমহল আর্ট গ্যালারি, ভীম বিলাস প্যালেস রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে মৌরচক, কাচের নক্সা করা ময়ূর রয়েছে এখানে। প্রাসাদের সরকারি সংগ্রাহশালাটি দেখে নিতে পারেন।

আরও পড়ুন- জানুন কালাপানি কারাগারের অজানা কথা, সঙ্গে আন্দামানের ট্যুর প্ল্যান

সিটি প্যালেসের আর একটি অংশ জগনিবাস প্যালেসে এখন বিলাসবহুল হেরিটেজ হোটেল রয়েছে। সিটি প্যালেসের ওপর থেকে পিছোলা লেকের মধ্যে যে প্রাসাদ দেখা যায়, সেটাই বিখ্যাত লেক প্যালেস। ১৭৪৬ সালে, দ্বিতীয় জগত সিংহ এই প্রাসাদ তৈরি করান। একটু দূরে জলের মধ্যে জগমন্দির। পিছোলা লেকের বাঁশি ঘাট থেকে নৌকো ভাড়া করে জগমন্দির থেকে ঘুরে আসতে পারেন।

আরও পড়ুন- কাশ্মীর বা হিমাচল বেড়ানোর প্ল্যান করছেন? তাহলে ঝালিয়ে নিন দুটি প্ল্যান

সিটি প্যালেসের প্রবেশ পথের ডানদিকে মহারাণা জগত সিঙের তৈরি, জগদীশ মন্দির রয়েছে। পাথর বাঁধানো সিঁড়ি উঠে গিয়েছে মন্দিরে। মন্দিরের আকৃতি অনেকটাই রথের মতো। জগদীশ মন্দিরে বিষ্ণুর পুজো হয়। মন্দিরের নির্মাণকাল ১৬৫১ খ্রিঃ। এরপর ফতে সাগর লেকের পাড়ে মোতিমা গরি। এটি রাণা প্রতাপ সিংহের স্মৃতিস্তম্ভ। বাগান ফোয়ারা দিয়ে সাজানো ছোট টিলার মাঝে চেতক ও রানা প্রতাপের মূর্তি রয়েছে। এখানে হল অফ হিরো সংগ্রাহশালাটিও দেখে নিতে পারেন।

উদয়পুরের অন্যান্য দ্রষ্টব্য গুলি হল। সহেলিওকা বাড়ি, নেহেরু পার্ক, সজ্জন গড়, গুলাববাগ, আহোর, শিল্পগ্রাম ইত্যাদি। উদয়পুর থেকে ২২কিমি দূরে একলিঙ্গজি। এখানে প্রাচীর ঘেরা ১০৮টি শিবমন্দির আছে। ৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দিরগুলি তৈরি করান মেবারের রানা। এখানে কালো পাথরের চতুর্মুখী শিবমূর্তি রয়েছে। ৪৮ কিমি দূরে ১৭ শতকে তৈরি শ্রীনাথজির মন্দির রয়েছে। এই জায়গার নাম নাথ দ্বার। দিওয়ালি, হোলি, জন্মাষ্টমীর সময় এখানে বেশ বড় করে উতসব হয়। এখানে ছবি তোলা নিষেধ।

পুষ্করউদয়পুর থেকে পুষ্করের দুরত্ব ২৭৯ কিমি। আজমেঢ় থেকে ১১ কিমি দূরে হিন্দু তীর্থক্ষেত্র পুষ্কর। পুষ্করের প্রধান আকর্ষণ ব্রহ্মা মন্দির। মন্দিরের কাছেই রয়েছে পবিত্র পুষ্কর সরোবর। কার্তিক মাসে শুক্লা একাদশী থেকে প্রতিপদ পর্যন্ত পুষ্কর তীর্থে বিশাল মেলা হয়। পুষ্কর হ্রদের চারপাশ ঘিরে ৫২টি স্নানের ঘাট রয়েছে। শীতে হ্রদের জলে পেলিক্যানের দল ভেসে বেড়ায়। হ্রদের জলে স্নান করে ব্রহ্মা মন্দিরে পুজো দিতে হয়।

আরও পড়ুন- আন্দুল রাজবাড়ির ইতিহাস নিয়ে ভ্রান্ত তথ্য ও ভুতুড়ে কাহিনি

রাস্তা থেকে সিঁড়ির ধাপ উঠে গিয়েছে মন্দিরে। মন্দিরের মধ্যে রুপোর সিংহাসনে লাল বর্ণের চতুরানণ ব্রহ্মামূর্তি রয়েছে। পুষ্কর শহরের দুই দিকের দুই পাহাড়ে সাবিত্রী ও গায়ত্রী দেবীর মন্দির রয়েছে। বাস স্ট্যান্ডের কাছে রঙ্গনাথ স্বামীর মন্দিরটিও দর্শনীয়।

আরও পড়ুন- নৃসিংহপুরের রাজবাড়ি কেন অভিশপ্ত, কী এমন অঘটন ঘটে?

জয়পুর পুষ্কর থেকে জয়পুরের দূরত্ব ১৪৫ কিমি। ১৭২৭ সালে মহারাজা দ্বিতীয় জয়সিংহ জয়পুর শহরের পত্তন করেন। শহরের রাস্তাঘাট, বাগিচা, তোরণ ইত্যাদির নক্সা করেছিলেন বিদ্যাধর ভট্টাচার্য। রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরের চক বাজার মন্দির, প্রাসাদমহল ভালো করে দেখতে হলে গাড়ি ভাড়া প্রয়োজন। জয়পুরের সিটি প্যালেসে যাওয়ার পথে বড় রাস্তার বাঁদিকে জালি কাজের ঘরোখা সমৃদ্ধ আকাশছোঁয়া হাওয়ামহল দেখা যায়। ১৭৯৯ খ্রিঃ রাজরানিদের জন্য এই মহল তৈরি করা হয়। রানিরা হাওয়া মহলে ঝরোখার আড়াল থেকে রাজপথে উত্সবের জৌলুস মিছিল ইত্যাদি দেখতেন।

এরপর বাঁদিকে রাস্তা ধরে একটু এগোলে সিটি প্যালেসের প্রধান দরজায় পৌঁছনো যায়। বিশাল এই প্রাসাদের স্থাপত্যে রাজপুত ও মুঘল স্থাপত্যশৈলির মিলিতরূপ। প্রবেশ পথের দুধারে দুটি পাথরের নক্সাকাটা হাতি দেখা যায়। জয়পুর সিটি প্রাসাদের মধ্যে আর্ট গ্যালারি ও মিউজিয়ামটি বেশ সমৃদ্ধ। প্রাসাদের দেওয়ানি খাস, দেওয়ানি আম, মুবারক মহল, চন্দ্রমহল দেখে নিতে পারেন। সিটি প্যালেস থেকে বেরিয়ে যন্তর মন্তর।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সূর্যঘড়ি রয়েছে এখানে। জয়সিংহের জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম নিদর্শন এই মানমন্দির। সিটি প্যালেসের চত্বর ছেড়ে এবার রামনিবাস বাগের দিকে যেতে হবে। সবুজ গাছপালা বাগান পার্ক ঘেরা, বিরাট এলাকার মাঝখানে অ্যালবার্ট হল মিউজিয়াম। এটি ইন্দো সেরাসনিক স্থাপত্য শালীর নিদর্শন। এরপর একে একে দেখে নিন, জয়পুর চিড়িয়াখানা, জয়পুর শহর থেকে ১২ কিমি দূরে করোয়া রাজাদের এককালের রাজধানী আমের। আমের দুর্গের মধ্যে রাজপরিবারের দেবী শীলামাতার মন্দির রয়েছে। রাজা মানসিংহ অধুনা বাংলাদেশের যশোরের দেবী যশোরেশ্বরী দেবী কালীকে এখানে এখানে স্থাপন করেন। দেবী অষ্টভূজা। এখানেও রয়েছে দেওয়ানি আম, জেনানা মহল, জয় মন্দির, শিশমহল, যশোমন্দির, সোহাগ মন্দির, সুখমন্দির। পাহাড়ের নীচে মাওটা লেক।

আমের দেখে ফেরার পথে সিশোদিয়া রানিবাগ, বিদ্যাধরজি কা বাগ, জলমহল, জয়গড় কেল্লা ইত্যাদি ঘুরে নেওয়া যায়। এ ছাড়া জয়পুর শহরের অন্যান্য দ্রষ্টব্যগুলি হল, ডল্স মিউজিয়াম, বিরলা প্ল্যানেটোরিয়াম, আগ্রা রোডের জৈন মন্দির, মোতি ডুংরি ও লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির।

এই সার্কিট ট্যুরের পরিকল্পনা ও তথ্য কেমন লাগল? আমাদের ফেসবুকে এই
পোস্টের কমেন্টবক্সে লিখে জানান। সেই সঙ্গে আমাদের পেজ ফলো করতে ভুলছেন নাতো?

আপনি বেড়াতে পছন্দ করেন? যুক্ত হয়ে যান আমাদের ফেসবুক গ্রুপে। ক্লিক করুন

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

খুব সহজে আমেরিকার নাগরিক হওয়ার পথ ‘ডঙ্কি রুট’- এক অজানা কাহিনি

পূর্ণেন্দু ব্যানার্জি- আমেরিকা, স্বপ্নের দেশ। একবার পৌঁছতে পারলেই একটা জীবন পরিপূর্ণ। অর্থ, আভিজাত্য, বৈভব, সামাজিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!