রিনচেংপং, পেলিং উত্তরে
রিনচেংপং- পশ্চিম সিকিমের ছবির মতো সুন্দর এই জায়গাটি পর্যটক মহলে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। পেলিং থেকে দূরত্ব খুব একটা বেশি নয়। মাত্র ৪০ কিমি। কিন্তু পেলিঙের মতো ভিড় আর হোটেলের প্রাচুর্য এখানে নেই। শান্তিতে হিমালয়ের বিখ্যাত শৃঙ্গরাজির অপার শোভা দেখা যায় এখান থেকে। কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাব্রু, রাথোং, কোকতাং, কুম্ভকর্ণ, প্রভৃতি তুষার শৃঙ্গের অসাধারণ দৃশ্য পর্যটককে উদ্বেলিত করবেই। গাড়ি ভাড়া করে এখান থেকে কাছাকাছির মধ্যে ঘুরে আসা যায় ১৮৬০ সালে তৈরি ব্রিটিশ কর আদায়কারীর বাসভবন বা হেরিটেজ হাউস, রিংচেনপম মনাস্ট্রি, পয়শন লেক, রবান্দ্র স্মৃতি বন প্রভৃতি। রিংচেংপং মনাস্ট্রিতে অতিবুদ্ধর একটি অভিনব তান্ত্রিক মূর্তি রয়েছে, যেটি সচারচর কোনও মনাস্ট্রিতে দেখা যায় না। এখান থেকে ছোট হাঁটা পথে ঘুরে আসা যেতে পারে ৬৩০০ ফুট উচ্চতার রিশম মনাস্ট্রিতে, যেখান থেকে চারপাশের দৃশ্য এক কথায় অপূর্ব। রিংচেংপঙের উচ্চতা ৫৫০০ ফুট।
কীভাবে যাবেন- নিউজলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে রিংচেংপঙের দূরত্ব ১৩৫ কিমি। আর গ্যাংটক থেকে দূরত্ব ১৩০ কিমি। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন বা গ্যাংটক থেকে রিংচেংপং গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন। আবার শিলিগুড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে শেয়ার জিপে জোড়থাঙে এসে গাড়ি ভাড়া করে রিংচেংপঙে পৌঁছনো যায়।
কোথায় থাকবেন– রিংচেংপং নেস্ট, হোটেল নোরলা, হোটেল মাউন্ট ভিউ।
পেলিং– পশ্চিম সিকিমের পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় জায়গা পেলিং। তবে জনপ্রিয়তার মূল্য যথেষ্ট চোকাতে হচ্ছে এই ছোট পাহাড়ি জায়গাটিকে। প্রচুর হোটেল আর দোকানপাটের ভিড়ে এর মধ্যে পেলিং যথেষ্ট ঘিঞ্জি। পেলিঙের উচ্চতা ৬৮০০ ফুট। বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার সুন্দর দৃশ্য দেখা যায় এখান থেকে। শিলিগুড়ি থেকে পেলিঙের দূরত্ব ১৩১ কিমি, আর গ্যাঙটক থেকে দূরত্ব (রাবংলা হয়ে) ১২১ কিমি।
পেলিঙের হেলিপ্যাডের দক্ষিণ পশ্চিমে ঘণ্টা খানেকে চার কিমি ট্রেক করে দেখে আসতে পারেন সিকিমের দ্বিতীয় প্রাচীন মনাস্ট্রি সাংগাচোলিং। ৯০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। সাংগাচোলিং থেকে চারপাশের দৃশ্য অসাধারণ। পেলিং থেকে গাড়ি ভাড়ে করে ঘুরে নিন চারপাশের দ্রষ্টব্য জায়গাগুলি। ৩০০ বছরের প্রাচীন গুম্ফা পেনিয়াংশি, পবিত্র হ্রদ খেঁচিপেরি, কাঞ্চনজঙ্ঘা, রিম্বি ও ছাম্বে জলপ্রপাত প্রভৃতি দ্রষ্টব্যগুলি দেখা হতে পারে দিনে দিনেই। কন্ডাক্টেড ট্যুর ছাড়া পায়ে হেঁটে যাওয়া যেতে পারে, সিকিমের দ্বিতীয় রাজধানী রাবডানেত্সের দিকে। পেমিয়ামশির মনাস্ট্রির নীচ থেকে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রাস্তা গেছে। এখন অবশ্য প্রচীন রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায় এখানে। তবে জায়গাটির প্রকৃতিক পরিবেশ দৃষ্টিনন্দন। পেলিং থেকে ৩২ কিমি দূরে সিকিমের প্রথম রাজধানী ইয়াকশামও ঘুরে আসতে পারেন পর্যটকেরা।
আরও পড়ুন- দেখে নিন অরুণাচল সফরের ট্যুর প্ল্যান
কথিত আছে ১৬৪২ খ্রি তিন জন বৌদ্ধ লামা, এখানে সিকিমের প্রথম চোগিয়াল (রাজার) অভিষেক করান। এর প্রমাণ স্বরূপ দাঁড়িয়ে রয়েছে নোরবুগাং চোরতেন, যেখানে পাথরের সিংহাসন ও পাথরের মধ্যে প্রধান লামার পদচিহ্ন এখনও দেখতে পাওয়া যায়। ইয়াকশামে দিন দুয়েক থাকতে পারলে নোরবুগাং কাথক লেক দুবদি গুম্ফা, ফ্যাম্বং জলপ্রপাত প্রভৃতি দেখে নেওয়া যায়। ইয়াকসম থেকে ট্রেকিং করে পৌঁছনো যায় জোমরি ও গোচালা। যেখান থেকে তুষারশৃঙ্গ দেখতে পাওয়া যায় হাত বাড়ালেই।
কীভাবে যাবেন–
নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে পেলিঙের জন্য পুরো গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া যায়। আবার শিলিগুড়ির বাসস্ট্যান্ড থেকে শেয়ার জিপে যাওয়া যায়।
কোথায় থাকবেন- আপার, মিডল, লোয়ার পেলিং মিলিয়ে বহু হোটেল রয়েছে। উল্লেখযোগ্য হোটেল ব্ল হিলস, হোটেল গড়ুরা, হোটেল নোরবুগাং, হোটেল শিম্ভো।
আপনি যদি বেড়াতে পছন্দ করেন তাহলে আজই যোগ দিন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে ভ্রমণ আড্ডা
উত্তরে- পেলিং বা রিংচেংপং থেকে সিংসোর ব্রিজ (এশিয়ার দ্বিতীয় উচ্চতম সেতু) দেখে চলে যেতে পারেন ছোট সুন্দর গ্রাম উত্তরেতে। ৭৬০০ ফুট উচ্চতায় শান্ত এই পাহাড়ি গ্রাম ছোট অবকাশ যাপনের পক্ষে আদর্শ। এখান থেকে বিখ্যাত সব ট্রেকিং রুট চলে গিয়েছে হিমালয়ের দুর্গম জায়গাগুলিতে। এর মধ্যে বিখ্যাত ট্রেক রুট হল নেপাল সীমান্ত চিউয়াভঞ্জম পেরিয়ে সিংগালিলা রেঞ্জ ট্রেকিং। এই পথে কাঞ্চনজঙ্ঘা, পানডিম, কাব্রু, প্রভৃতি শৃঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টেরও অসাধারণ দৃশ্য দেখাতে পাওয়া যায়। উত্তরে গ্রামে পায়ে হেঁটে দেখে নেওয়া যায় আশে পাশের জায়গাগুলি। গুম্বাদাঁড়া পোখরি, কাগইয়োতু মনাস্ট্রি, ট্রাউট প্রজনন কেন্দ্র, দুর্গামন্দির প্রভৃতি দেখে নেওয়া যায় একবেলায়। ইচ্ছে করলে ঘণ্টা তিনেকের হাঁটায় চার কিলোমিটার পথ ট্রেক করে পৌঁছে যেতে পারেন পাহাড় জঙ্গলের মধ্যে লুকনো মেইন বাস জলপ্রপাতে। ঘন জঙ্গলের মধ্যে উঁচু পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ে জলধারার রোমাঞ্চকর দৃশ্য মনে থাকবে বহুদিন।
আরও পড়ুন- চলুন মেঘ সূর্যের দেশে অরুণাচল
কীভাবে যাবেন– নিউজলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে উত্তরের দূরত্ব ১৬০ কিমি। পুরো গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন অথবা জোড়থাং পর্যন্ত শেয়ার জিপে এসে ধরতে পারেন উত্তরের শেয়ার জিপ। তবে দুপুরের পর থেকে জোড়থাং থেকে উত্তরের শেয়ার জিপ অমিল হলে পুরো গাড়ি ভাড়া করতে হবে। পেলিং বা রিংচেংপং দেখেও আসা যায় উত্তরে।
কোথায় থাকবেন– গ্রিন ভ্যালি হোটেল, নাগ ভ্যালি রিসর্ট।