Breaking News

প্রাচীনকাল থেকেই বেল কেন অমৃততুল্য ফল, জেনে নিন

বেল ফলকে শ্রীফল বলা হয়। এর পিছনে অন্যতম কারণ একমাত্র এই ফল শরীরের বিশেষ করে পেটের সমস্যা দূর করে। সুস্থ রাখে, রূপে জেল্লা নিয়ে আসে। শহরাঞ্চলে নগরায়ণের ফলে বেল ফলের গাছ খুব একটা দেখা যায় না, যদিও গ্রামাঞ্চলে এর কদর যথেষ্ট রয়েছে। নিয়মিত ভাবে বেল ফল যদি খাওয়া যায়, তাহলে পেটের যাবতীয় সমস্যা থেকে অনেক দূরে থাকা যায়।
বেলের পুষ্টিগুণ
প্রাচীন কালে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেই বেল ফলকে অত্যন্ত উপকারী ও ঔষধী ফল হিসেবে পরিচিতি দেওয়া হয়েছে। যদিও মডার্ন মেডিসিনের যুগে গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, এই ফলে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান তো আছেই, তাছাড়াও আরও অনেক পুষ্টিগুণ। যেমন ১০০ গ্রাম বেলে পাবেন ১.৮ গ্রাম প্রোটিন, ৩১.৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ০.৩ গ্রাম ফ্যাট, ৫৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন এ, ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৮৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৬০০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম।

কী কী উপকার আছে
প্রাচীন আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে চরক সংহিতায় বেলের উল্লেখ রয়েছে। বেল গাছের সবকটি অংশই ভেষজ গুণসম্পন্ন। তাই আজ থেকেই বেল খাওয়া শুরু করুন। নিয়ম মেনে, বেল যদি খাওয়া যায়, তাহলে তার উপকার কয়েক দিনের মধ্যেই অনুভব করতে পারবেন।


১. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
বেল যে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এটা প্রমাণিত সত্য। আধুনিক সময়ে দাঁড়িয়ে সুষম আহার ও পানীয়ের অভাব রয়েছে। বহু মানুষ কর্মসংস্কৃতির জন্য সময়ে খাবার খেতে পারেন না বা হয়ে ওঠে না। আর এই অনিয়মিত খাদ্যভ্যাস জন্ম দেয় পেটের রোগের। আর এখানে মহৌষধ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বেল। মল পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত বেলের শরবত পান করা উচিত। পাকা বেলের শাঁস বের করে চিনি এবং সামান্য নুন দিয়ে মিশিয়ে পরিমাণ মতো জলে চটকে নিন। শরবত প্রস্তুত হলে বড় ছাঁকনিতে ফেলে তা পান করে নিতে পারেন। সপ্তাহে একদিন অন্তত বেলের শরবত পান করা উচিত।

২. ডায়েরিয়া কমায়
পাকা বেলের শরবত যেমন কোষ্ঠকাঠিন্যে বা অম্লশূলে উপকারী, তেমন কাঁচা বেল ডায়েরিয়ার জন্য অব্যর্থ ওষুধ। ডায়েরিয়া যদি মাঝে মধ্যেই আপনাকে বিব্রত করে তোলে তাহলে অবশ্যই কাঁচা বেল খেতে পারেন। কাঁচা বেল স্লাইস করে কেটে রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর তা গুঁড়ো করে নিন আর এই গুঁড়ো ১ চামচ নিয়ে ব্রাউন সুগার আর গরম জলে মিশিয়ে খান। দিনে দু বার খেতে হবে এই জল। আপনাকে ফল পেতে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।

৩. পেটে আলসারের ওষুধ
দিনের পর দিন পেটের যন্ত্রণা, কিছু খেলেই বমি, শরীর দুর্বল এমন অনুভব যদি হয়ে থাকে পেটে আলসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর আলসার হলে তার চিকিতসা সবার আগে জরুরি, নয়তো ক্যান্সারে মোড় নিতে বেশি সময় নেয় না। পেটে আলসার হলে, যেমন ওষুধ খাওয়া বাধ্যতামূলক, তেমনই দ্রুত উপকার পেতে বেল অবশ্যই খাবেন। পাকা বেলের শাঁসে সেই ফাইবার আছে যা আলসার উপশমে সাহায্য করে। সপ্তাহে তিন দিন বেলের শরবৎ করে খান আলসার দূর করতে। এছাড়া বেলের পাতা সারা রাত জলে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সেই জল পান করলেও আলসার রোগে উপকার পাওয়া যায়।

৪. সুগার বা মধুমেহ রোগে উপকারী

মধুমেহ বা ডায়াবেটিক রোগীর ক্ষেত্রেও বেল উপকারী। বেলের মধ্যে মেথানল নামের একটি উপাদান রয়েছে যা ব্লাড সুগার কমাতে অনবদ্য কাজ দেয়। এমনটাই দাবি গবেষকদের। সাম্প্রতিক গবেষণায় এটি ধরা পড়েছে। তবে ভালো ফল পেতে পাকা বেল শরবৎ করে নয়, এমনিই খেতে হবে।

৫. যক্ষ্মা থেকে বাঁচতে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে
কথাটা শুনেই হয়তো অনেকে হাসবেন বা বাজে কথা বলবেন, কিন্তু হালের গবেষণা বলছে পাকা বেলের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি মাইক্রোবায়াল উপাদান, যা যক্ষ্মার জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে, পাশাপাশি শরীরের ইমিউনিটি তৈরি করে। যক্ষা রোগীদের ক্ষেত্রে তাদের যা ওষুধ চলছে, তার সঙ্গে রাতে মধু মিশ্রিত বেলের শরবত প্রয়োজন। প্রায় এক মাস এক কাপ করে এই শরবত পান করলে দ্রুত উপকার মেলে।

৬. আর্থ্রারাইটিস উপশম করে
এটি একটি এমন সমস্যা যা আজকাল শুধু বয়স্কদের নয়, অনেক কম বয়সের মানুষদেরও হচ্ছে। গাঁটে গাঁটে ব্যথা, চলতে সমস্যা এই সবই এর লক্ষণ। কিন্তু বেলে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান এই ব্যথার হাত থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে। নিয়ম করে তাই বেল খান।

৭. স্কার্ভি কমায়
স্কার্ভি হল দাঁতের একটি সমস্যা যেটি মূলত ভিটামিন সি’র অভাবে হয়। দাঁতের ক্ষয় হয় মূলত এই রোগ হলে। বেল এই রোগের প্রকোপ কমায়। আমরা দেখেইছি যে বেল হল ভিটামিন সি’র একটি অনবদ্য উৎস। তাই আমরা আমাদের দৈনন্দিন ভিটামিন সি’র চাহিদা বেল থেকে পূরণ করতে পারি।

৮. ক্যানসার থেকেও দূরে রাখে
ক্যানসার আজকের দিনের এক মহামারী বলা যায়। আমরা সবাই চাই এই রোগটি থেকে দূরে থাকতে। বেল কিন্তু আমাদের এই রোগ থেকে দূরে রাখে। এতে আছে অ্যান্টি প্রলেফিরেটিভ ও অ্যান্টি মুটাজেন উপাদান। এই উপাদান টিউমার হতে দেয় না সহজে। আর যেহেতু এই ফলে হাই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান আছে তাই ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।

৯. আভ্যন্তরীণ সার্বিক স্বাস্থ্য ধরে রাখতে
বেলে আছে ফেনোলিক কম্পাউন্ড যা উচ্চ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই গাছের সব অংশই অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর। আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আমাদের কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। ড্যামেজ কোষ থেকে ফ্রি র্যাটডিকেল হওয়া কমায়। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বার্ধক্য কমায় আর ত্বকের যৌবন ধরে রাখে।

১১. রক্ত শুদ্ধ করে
আমাদের শরীরের প্রধান উপাদানই তো রক্ত । রক্তের মাধ্যমেই পুষ্টিগুণ সব অংশে পরিবাহিত হয়। তাই রক্তের শুদ্ধ থাকাটা খুব দরকার। বেল এই রক্ত শুদ্ধ করতে খুব ভালো কাজ দেয়। খানিকটা পাকা বেলের রসের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে খেলে এটি রক্ত শুদ্ধ করে। ট্যান দূর করে। শুধু রক্ত নয়, কিডনি ও লিভারের কাজও ঠিক করে।

১২. এনার্জি বাড়ায়
আজকের দিনে আমাদের অনেক কাজ করতে হয়। বসে থাকার সময় নেই আমাদের। তাই এনার্জি বাড়াতেই হবে। বেল এই এনার্জি বাড়াতে অনবদ্য। ১০০ গ্রাম বেল ১৪০ ক্যালোরি এনার্জি দেয়। বেল মেটাবলিক স্পিড বাড়ায়। আর এতে হাই প্রোটিন আছে বলে পেশি তাড়াতাড়ি সজাগ হয়। তাই আমরা অনেকটা সময় জুড়ে এনার্জেটিক থাকতে পারি। অনেক কাজ করতে পারি।

১৩. লিভারের যত্ন
বেল বিটা ক্যারোটিনের সমৃদ্ধ উৎস। আর বিটা ক্যারোটিন হল লিভার ভালো রাখার অন্যতম মূল চাবিকাঠি। বেলে আছে থিয়ামিন আর রাইবোফ্লেভিন। এই দুই উপাদানই লিভারের শক্তি বাড়ায় খুব ভালো ভাবে। তাই লিভার ভালো রাখতে রোজ বেল খাওয়ার অভ্যেস করুন।

আমাদের চ্যানেলে যুক্ত হয়ে যান

About Orbit News

Check Also

চুল ঝরে পড়ছে? জানুন আসল কারণ

আপনি কি খেয়াল করছেন, স্নান করতে গিয়েছে আগের থেকে চুল বেশি ঝরছে! তাহলে এখনই সচেতন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!